আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।
এটি এক সময় নবাবদের প্রাসাদ ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নওয়াব আবদুল গণি। তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীকালে তার ছেলে বাড়িটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করেন, যা ফরাসিরা বাণিজ্য কুঠি হিসেবে ব্যবহার করত।
১৮৩৫ সালে নওয়াব আবদুল লতিফের বাবা এটি ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে নওয়াব আবদুল লতিফ ভবনটির নির্মাণ শুরু করেন। ১৮৫৯ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৭২ সালে। সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে নবাব আহসান উল্লাহ তা পুনর্নির্মাণ করেন। ভবনটি অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ফলে পুরনো সেই ভবনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
আহসান মঞ্জিলের নির্মাণশৈলীও দেখার মতো। এর ওপরে একটি গম্বুজ রয়েছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়া ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ চূড়া ছিল। প্রাসাদটি দু’টি অংশে বিভক্ত। পূর্বাংশে বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, কার্ডরুম ও মেহমান কক্ষ রয়েছে। পশ্চিমাংশে রয়েছে নাচঘর ও আবাসিক কক্ষ। নিচতলায় রয়েছে দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
নবাব আমলের ডাইনিংরুম, তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস। যেমন- আয়না, আলমারি, সিন্দুক, থালাবাসন, চেয়ার-টেবিল, হাতির মাথার কঙ্কাল, বিভিন্ন তৈলচিত্র, ফুলদানি, পানদান, ড্রয়িংরুম, নাচঘর ইত্যাদিসহ মোট চার হাজার ৭৭টি নিদর্শন।
গ্রীষ্মকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। সব ঋতুতেই শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। শিশুদের জন্য ৫ টাকা। প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে প্রবেশ করানো হয়।
এ ছাড়া বিদেশীদের জন্য ৭৫ টাকা প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে সদরঘাটের গাড়িতে উঠবেন। সদরঘাট নেমে একটু হাঁটলেই চোখে পড়বে সুরম্য অট্টালিকা আহসান মঞ্জিল। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন আহসান মঞ্জিলে। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আপনিও আসতে পারেন আহসান মঞ্জিলে।
0 comments:
Post a Comment